জাবি ক্যাম্পাস, আমার যৌবন, আমার নস্টালজিয়া

Ela
Ela
3 Min Read

ঠাণ্ডা পরশে ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে তাকিয়ে দেখি জাবি’র (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) গা ঘেঁষা মহাসড়ক বেয়ে চলছে আমার গাড়ি। এখনো তাহলে স্নায়ু টের পায়! আমি শীতল জানলায় নাক লাগিয়ে তাকিয়ে থাকি পাক্কা সাড়ে পাচঁ মিনিট। বিশমাইল ছুঁয়ে প্রান্তিক ছুঁয়ে ডেইরি ছুঁয়ে যখন এমএইচ হল পার হচ্ছি, তখন গালের একটি নির্দিষ্ট রেখায় ঠাণ্ডা অনুভূতি টের পেলাম। আমার চোখ বেয়ে জলের ধারাটুকু কোলে পড়লো।

এমনি কোন এক শীতের দিনে আম্মার সাথে জাবিতে ভর্তির জন্য গিয়েছিলাম ঠিক বছর দশেক আগে। তারপর নিরবধি কাটিয়ে দিয়েছিলাম ছয়টি বছর। মানুষ আসে, চলে যায়, নতুন আসে পুরাতন হবার জন্য। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের ইটগুলো থাকে, টিএসসির বারান্দা থাকে, মুক্তমঞ্চ থাকে, লাইব্রেরি মহুয়াতলা থাকে আগের মত। ডেইরি পাড় হবার সময়ও স্পষ্ট দেখতে পেলাম গোটা দশেক স্বপ্নবাজ তরুণ আড্ডা দিচ্ছে, আমিও আছি। এটাকে কি হ্যালুসিনেশন বলে? কিন্তু আমিতো জানি আমি ঠিক ওখানেই ছিলাম বছর দশেক আগে! ঠিক এভাবেই!

বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা শুধুই সাময়িক পাঠশালা মনে করেন তাদের সাথে আমার বনবে না। বিশ্ববিদ্যালয় একটি নতুন জন্মের ঠিকানা, বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানুষের অনেকগুলো স্মৃতির ঠিকানা, বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো মানুষকে বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এনে একসাথে মিলিয়ে দেয়ার কাল্পনিক পরিবারকাঠামো। এখানে দ্বন্দ্ব আছে, হাতে হাত রেখে আন্দোলিত হবার তারুণ্য আছে, এখানে প্রতিবাদ আছে। পাঁচ ছটি বছর পড়তে এসে শুধু পড়েই যারা যায়, যাদের এখানকার মাটি বাতাসের সাথে কোন সখ্য গড়েনি তাদের সাথেও আমার বনবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছগুলো, লালপদ্মগুলো, ট্রান্সপোর্টের পাখিগুলো, দেয়ালে জ্বলজ্বল করা চিকাগুলো, গাছে বাধা উৎসবের ড্যাংলারগুলোও আমার আপন। শত পরিশ্রমেও হাসি মুছে যেতে দেখিনি যে মুক্তিযোদ্ধা রিকশাওয়ালা; বটতলার বেলাল ভাইয়ের হাসিমাখা মুখ যে কিনা দেখলেই চা বানানো বাদ দিয়ে দৌড়ে এসে হ্যান্ডশেক করবার ছলে ছুঁয়ে দেখে সত্যি আমি এসেছি কিনা, যে কিনা একটা ব্ল্যাক কফির সাথে একটা গোল্ডলিফ দিতে এখনো ভোলে না; জয়নাল ভাই যিনি দূর থেকে দেখে সাদা দাড়ির আড়ালে হাসতে থাকেন, ভাতের থালায় দুটোর জায়গায় তিনটে কাঁচামরিচ দিতে এখনো ভোলেন না, ক্যাম্পাস মানে তারাও। ক্যাম্পাস মানে শুধুই ডিপার্টমেন্ট, হলের চার দেয়ালের রুম যাদের কাছে তাদের সাথে আমার বনবে না একদম।

চলে যাওয়া সময়টুকু আমাদের সঞ্চয়। যারা গোঁড়া বাস্তববাদী মন নিয়ে এসকল ফেলে আসা স্মৃতি আওড়ানোকে সময় অপচয় মনে করেন, তাদের সাথে আমার একদম মিল নেই। আমি স্মৃতি হাতরাই সুযোগ পেলে। কেননা স্মৃতি আমাকে আরো কঠোর, শক্ত, আত্মবিশ্বাসী হতে শেখায়। স্মৃতি আমাকে শেখায় ঠিক কিভাবে পিছলে পড়তে গিয়ে পতন ঠেকিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে, স্মৃতি আমাদের শেখায় কিভাবে মনোবল অটুট রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

ভালো থেকো জানবিবি।

প্রকাশঃ উইম্যান চাপ্টার, ২০১৭

লিংকঃ https://womenchapter.com/views/25085

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *